আচ্ছা, ধরুন আপনি নিজেই নিজের বন্ধু… এখন যদি বলা হয় আপনার এই বন্ধুকে একটি রেটিং দিতে হবে ১০ এর মধ্যে.. তবে আপনি তাকে কত দিবেন ?
একটা সাইকোলোজিকাল রিসার্চের জন্য প্রশ্নটা করা হয়েছিল সর্বোমোট ১০০ জনকে… যাদের মধ্যে বয়স, লিঙ্গ ও আর্থ-সামাজিক অবস্থারও বেশ ভ্যারাইটি ছিল।
প্রশ্নটা সচারচর স্বাভাবিক প্রশ্নই বটে তবে এর থিমটা কিছুটা ভিন্ন ছিলো…
এই সার্ভের মূল উদ্দেশ্য ছিলো – ব্যক্তি নিজের কাছে নিজে কতটা পছন্দের কিংবা বিচার প্রবনতার ক্ষেত্রে সে কতটা দক্ষ … সে নিজের কাছে নিজে কতটা সঠিক.. কতটা ভুল … তার চিন্তা..তার পছন্দ তার কাছে কতটা গ্রহনযোগ্যতা পায় তা অ্যানালাইসিস করা… সর্বোপরি সেলফ অ্যানালাইসিস….
এখন স্বাভাবিকভাবে কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয়… আচ্ছা আপনি মানুষ হিসেবে কেমন? যদি বলি আপনি নিজেকে নিজে বিচার বিশ্লেষণ করে একটা রেটিং দিতে পারেন… হোক সেটা ১- ১০ এর মধ্যে…
তবে অধিকাংশদের মধ্যেই অহংবোধ চলে আসবে… তখন তাদের উত্তরগুলো হবে পুরোটাই তাদের মনগড়া… যা কিনা রিসার্চের সঠিক ফলাফল হিসেবে গন্য করা যায় না ।
এর জন্যই প্রশ্নটি ছিলো ব্যতিক্রমধর্মী স্বাভাবিক…। কেননা বন্ধু মানুষের জীবনে অন্যতম এক অপরিহার্য সত্তা। যাকে নিজের অন্যতম এক প্রতিচ্ছবি হিসেবে ধরা হয়… এর দ্বারা তাদের ভালোলাগাগুলোও বিশ্লেষণ করা যায়…।
তো এক্ষেত্রে ব্যক্তি বন্ধুর আদলে নিজেই নিজেকে বিশ্লেষণ করছে..
রিসার্চের সুবিধার জন্য এই রেটিংএর অন্তর্ভুক্তদের ৩ টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে… এখানে তুলনামূলক নেগেটিভ এবং পজেটিভ রিভিউগুলো মিক্স করে তুলে ধরা হয়েছে.. পরবর্তীতে তথা vol- 2 তে এর বিস্তারিত তুলে ধরা হবে..
ক্যাটাগরি -১
রেটিং (০-৩)
এই ধরনের মানুষগুলো ব্যক্তিজীবনে বেশ সফল হয়ে থাকে… মানুষ হিসেবে এরা খুব বেশি স্ট্রেইট কাট হয়ে থাকে.. যা কিছু বলার সরাসরি বলে…
এই রেটিং এর অর্ন্তভুক্ত মানুষগুলো যে কোন ব্যাপারেই খুব বেশি উদাসীন.. এরা কোন বিষয়ই খুব বেশী সিরিয়াসলি নেয় না.. অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরা আপনার কথা বুঝতে পারে না কিংবা বুঝতে চায় না.. এরা অনেকটা একমুখী স্বভাবের হয়ে থাকে…
এরা তুলনামূলক রসবোধহীন এবং খুতখুতে মেজাজের হয়ে থাকে… একাকীত্বের মাত্রা এদের মাঝে বেশ লক্ষ্যনীয়…
এরা নিজেদের কাছে নিজেরা এক একটা বিরূপ প্রতিচ্ছবি..
মেন্টাল ডিপ্রেশনের মাত্রা এদের তুলনামূলক অন্যদের থেকে বেশি হয়ে থাকে… অধিকাংশ সময়ই এদের মাঝে অশান্তি, উদ্বেগ, অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়..
কখনো কখনো এদের মাঝে Generalized anxiety disorder লক্ষ্য করা যায় ।
ক্যাটাগরি -২
রেটিং (৪-৭)
এরা অন্যদের থেকে বেশী ভাবতে পছন্দ করে.. এদের মাঝে অতিরিক্ত বিচার বিশ্লেষণের প্রবনতা দেখা যায়…
এই ধরেনর মানুষগুলো অধিকাংশ মধ্যপন্থায় বিশ্বাসী… এরা বিচার- বিশ্লেষণে অনিশ্চয়তার নির্ভরশীল… তাই এরা সবসময় নিজেদেরকে প্রবাবিলিটির মধ্যে রাখতে পছন্দ করে.. এই ধরনের মানুষগুলো দ্বিধা-দন্দ্বে ভোগে সবথেকে বেশি মাত্রায়…
অতিরিক্ত দ্বিধা-দন্দ্বের ফলে এরা বিচার- বিশ্লেষণের দিক থেকে এক পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী ।
কখনো কখনো এদের মাঝে Obsessive and compulsive disorder লক্ষ্যনীয়..
ক্যাটাগরি -৩
রেটিং (৮-১০)
এই রেটিং এর আওতাভুক্ত মানুষগুলো তুলনামূলক বেশ ইমোশনাল.. এরা বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকে… কর্মক্ষেত্রেও এদের সফলতা লক্ষ্যনীয়.. এদের মাঝে বেশ বন্ধুত্বপূর্ন স্বভাব লক্ষ্যনীয়…
এই ধরনের মানুষগুলো নিজেদের কাছে নিজেরা অতিরিক্তই পছন্দনীয় হয়ে থাকে.. ফলে এরা প্রচন্ড মাত্রায় সেলফ সিকনেসের দ্বারা আক্রান্ত… কখনো তা আত্ন বিকৃতির রূপও নিতে পারে…
এদের কাছে অন্যদের থেকে নিজের প্রায়োরিটিটাই সবথেকে বেশি.. এবং অতিরিক্ত মাত্রায় আত্মবিশ্বাসী হওয়ার ফলে নিজেকে বিচার বিশ্লেষণের কিংবা নিজের ভুল- ত্রুটি ধরার ক্ষেত্রে এরা বেশ অপরিপক্ব.. স্বার্থসিদ্ধি মূলক আচরণ এদের মাঝে বেশ লক্ষ্যনীয়… কখনো কখনো এদের মাঝে Personality disorder দেখা দিতে পারে..।
এই রিসার্চের জন্য ১০০ জনকে প্রশ্নটা করা হলেও ভ্যাটিয়েবলস ছিলো বেশ… ৫৯ জনকে প্রশ্নটা সরাসরি করা হয়.. সামনাসামনি থেকে এবং তাদের রিয়েল টাইম এক্সপ্রেশনও পাওয়া যায়..
২৮ জনকে বিভিন্ন মাধ্যমে করা হয় প্রশ্নটি… এদের ক্ষেত্রে রিয়েল টাইম এক্সপ্রেশন পাওয়া যায়নি তবে কিছু মন্তব্য পাওয়া গেছে…
আর বাকি ১৩ জন বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে ইগনোর করে…
৩৭ জন প্রশ্নটা নিয়ে বেশ কৌতুহল প্রকাশ করে… এদের থেকে পাওয়া ডাটাগুলো ছিলো বেশ পিয়র..
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায় ১২% ক্যাটাগরি -১ এর অন্তর্গত, ৩৭% ক্যাটাগরি- ২ এর অন্তর্গত এবং মেজরিটির দিক দিয়ে ৫১% ক্যাটাগরি -৩ এর অন্তর্গত…
” মানুষ পৃথিবীর সবথেকে রহস্যময়ী জীব… এদেরকে কখনোই কোনকিছু দ্বারা পরিমাপ করা সম্ভব নয়… তবে এদের আচরন পরিমাপের দ্বারা এদের সম্মন্ধে বেশ কিছু ধারনা পাওয়া সম্ভব…. তবে সে আচরন গবেষণাগারে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অবাঞ্চিত প্রভাবক বাদ দিয়েই প্রকৃত ফলাফল পাওয়া সম্ভব…
তবে একটা নির্দিষ্ট জনসমষ্টির উপর সার্ভে চালনা করেও তাদের আচরনের সম্মুখ ধারনা পাওয়া সম্ভব.. এই রিসার্চের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল এটি…
তাছাড়া শুধুমাত্র একটা প্রশ্ন দিয়ে মানুষ বিচার করা যায় না.. এক্ষেত্রে সঠিক ফলাফল পাওয়াও বেশ মুশকিল… কেননা সঠিক ফলাফল পাওয়ার জন্য ব্যক্তির ঐ সময়ের মানসিক অবস্থা সবথেকে বেশী দায়ী থাকে…
সুতরাং এখানে সর্বোপরি একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস তুলে ধরা হয়েছে…”
বিঃদ্রঃ রিসার্চের ডাটা কালেক্ট করার ক্ষেত্রে একজন ম্যাডাম বেশ হেল্প করছে এর জন্য তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ… ধন্যবাদ আপনাকে।
ক্যাটাগরি নিয়ে বিস্তারিত vol -2 তে প্রকাশ করা হবে… সেখানে স্পেসিফিক ভাবে পজেটিভ এবং নেগেটিভ রিভিউগুলো তুলে ধরা হবে.. ☺